প্রায় অর্ধশত বৎসর পূর্বে প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য শিক্ষা ও সংগ্রামে খ্যাত ডুমুরিয়ার উত্তর জনপদের আখাঙ্খার প্রতীক গণমানুষের স্বপ্ন লালিত প্রতিষ্ঠান শাহপুর মধুগ্রাম কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় । উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকে জনসাধারণের শিক্ষা বিস্তারে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি নিয়ে অত্র এলাকায় কয়েকটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৫ কি.মি দূরের ব্রজলাল কলেজই ছিল উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এখানকার শিক্ষার্থীদেরকে মাটির রাস্তায় গ্রীষ্মে বর্ষায় এক হাটু ধুলো জল কাদা পেরিয়ে অনেক কষ্টে লেখা পড়া শিখতে যেতে হত। থাকতে হত দূর দূরান্তে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বিল ডাকাতিয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো তথা উত্তর ডুমুরিয়ার সচেতন মানুষেরা এলাকার উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেন। ১৯৬৯ সালের ১১ মার্চ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আমীর আলী জোয়ারদারের (অব. জেলা ও দায়রা জজ) আহবানে এলাকার শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন মহৎ ব্যক্তিবর্গ সাড়া দিয়ে গণমানুষের সন্তানদের শিক্ষার জন্যে খুলনা-সাতক্ষীরা যতীন কাশেম সড়কের পাশে শাহপুর সংলগ্ন মধুগ্রাম মৌজায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শাহপুর ও মধুগ্রামের সংযোগ সীমানায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত জমির উপর কলেজটি স্থাপিত হয় বলে দুই বর্ধিষ্ণু গ্রামের নাম অনুসারে কলেজটির নামকরণ করা হয় শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ। এলাকার উদার ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করে মেধা, শ্রম, অর্থ ও জমি দান করেন। প্রকৃতপক্ষে অত্র জনপদের সর্ব সাধারণের শ্রমে, অর্থে ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে কলেজটি। ১৯৭০ সালে স্বীকৃতি পায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের নবযাত্রায় সামিল হয় আপামোর জনসাধারণ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই কলেজের অনেক ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধোত্তর পর্বে নতুন করে শিক্ষার যাত্রায় শুরু হয় ভবন নির্মাণ ও শিক্ষক নিযুক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বলে চিহ্নিত এই এলাকার মানুষের শিক্ষা দরদী মন-মানষিকতা, শ্রম ও মেধায় তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক পর্যায়ের স্বীকৃতি পায় কলেজটি। ২০১২ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি নিয়ে এখানে ¯œাতক সম্মান চালু হয়। শুরু থেকেই কলেজটিতে ব্যাপক পরিমাণ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী সমাজ ও দেশের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। এলাকার শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান এই কলেজটি অত্র এলাকার সর্বসাধারণের আশা আখাঙ্খার কেন্দ্র বিন্দু।